ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবর পেঁয়াজ কিনছে না কেউ। কারণ দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল। অন্যদিকে টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজে পচন ধরেছে, মানও ভালো নয়। এরপরও আগামী মার্চ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আরও প্রায় ৪৭ হাজার টন পেঁয়াজ আনার চুক্তি রয়েছে টিসিবির। যেগুলো আগাম আমদানি চুক্তি করা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি পেঁয়াজ নিয়ে টিসিবি গচ্চা দিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কারণ এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিদেশ থেকে কেনা রয়েছে। যা দেশে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে। তাও আবার গড়ে এক চতুর্থাংশ পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে বিক্রি না হওয়াতে।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এখনও প্রায় ১৩ হাজার টন পেঁয়াজ বন্দরে এসে রয়েছে। বিভিন্ন হিমাগারে আছে কয়েক হাজার টন পেঁয়াজ। পাশাপশি টিবিবির গুদামে মজুদ থেকে যে দুই থেকে তিন হাজার টন পেঁয়াজ-ডিলারদের দেয়া হয় তাও মন্থর গতিতে সরবরাহ হচ্ছে। কারণ চাহিদা না থাকায় ডিলাররা পেঁয়াজ ওঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল থাকার সময় বাজার সামাল দিতে এবার সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুরোধ জানিয়েছিল। এসব কোম্পানি দ্রুততম সময়ে পেঁয়াজ আমদানি করে টিসিবিকে দিয়েছে। তারাও বেশ চড়া দামে ওইসব পেঁয়াজ এনে দিয়েছে বিদেশ থেকে। তবে এখনও তাদের দাম পরিশোধ করতে পারেনি টিসিবি। বাজারে দাম পড়ে যাওয়াতে তারাও আশঙ্কায় রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না। আমাদের পেঁয়াজ এনে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আমরা দিয়েছি।’
এমন পরিস্থিতিতে প্রায় এক মাস ধরে টিসিবি কিছু কৌশলে পেঁয়াজ বিক্রির চেষ্টা করলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। সংস্থাটির অন্য পণ্য চিনি, তেল, ডালের সঙ্গে ডিলারদের তিন টন পেঁয়াজ উঠানো বাধ্যতামূলক করে দিয়ে রেখেছে সংস্থাটি। তাতে আবার পেঁয়াজ বিক্রি না করতে পেরে ডিলাররা তিন-চারদিন ধরে কোনো পণ্যই উঠাচ্ছেন না। কারণ একদিনের বরাদ্দের এক-দেড় টন করে অন্যান্য পণ্য বিক্রি হলেও পেঁয়াজ রয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি ট্রাকসেল ঘুরে ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, ওইদিন বাজারে বিক্রি হওয়া টিসিবির বিদেশি পেঁয়াজ প্রতি বস্তায় গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশই পচা। সেগুলো বাছাই করে বিক্রি করছে কোনো কোনো ডিলার। কেউ কেউ আবার অন্য পণ্যের সঙ্গে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কেনা বাধ্যতামূলক করেছেন টিসিবির নির্দেশ মতো। আর তার মধ্যে চালিয়ে দিচ্ছেন ওইসব পচা পেঁয়াজ।
এদিকে পচা পেঁয়াজ উঠাতে ডিলারদের অনাগ্রহের কারণে গত কয়েক দিন যাবৎ বরাদ্দের তিন টন পেঁয়াজের সঙ্গে মান ভেদে ২০০ থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ ফ্রি দিচ্ছে টিসিবি। আর ডিলারদের দাবির মুখে রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে এ বরাদ্দ কমিয়ে দুই টন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের এই সময় পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় এ বছর সর্বমোট দেড় লাখ টন পেঁয়াজ কিনেছে টিসিবি। এখনও তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ রয়ে গেছে। যা মার্চের শেষ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে দেশে আসবে। এসব চুক্তি গত বছরে করা হয়েছে, যা বাতিলও সম্ভব নয়। এরমধ্যে দেশি পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হওয়াতে এ পেঁয়াজ টিসিবির ‘গলার কাঁটা’ হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, ৪০ থেকে দফায় দফায় ১৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। এরমধ্যে টিসিবি অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি ও নতুন ডিলার বাড়ানোর মতো বেশকিছু সিন্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাতে কোনো সুফল আসেনি। পেঁয়াজ নিয়ে অস্বস্তি কমেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ‘টিসিবির প্রধান কাজ বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। বেশি পেঁয়াজ ক্রয়ের কারণেই এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে উঠেছিল। এ বছর সে পেঁয়াজ ১৫ টাকায় নামিয়েছে টিসিবি। এতে প্রতি কেজিতে জনগণের ১৮৫ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আমাদের একটি হিসাবে রয়েছে যে এমন পরিস্থিতিতে জনগণের ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেঁচেছে, যা গুটিকয়েক সিন্ডিকেটকারী আগের বছর হাতিয়ে নিয়েছিলেন।’